বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আরও একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে একটি মহল। ঘটনাটি ঘটেছে আনোয়ারা উপজেলার পূর্ব বরৈয়া ঠান্ডা মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ইসলাম অবমাননার গুজব রটিয়ে ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মহাজনকে বিক্ষোভের মুখে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গিয়েছে, গত বুধবার ওই প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়। তিনি ইসলামবিদ্বেষী কথাবার্তা বলেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এই জন্য তাঁকে ডেকে পাঠানো হয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে । তখনই হঠাৎ একদল ছাত্রকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। তারা তদন্ত ছাড়াই প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানাতে থাকে। ফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আক্তারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন চন্দন মহাজন।
পদত্যাগ পত্রে ঐ শিক্ষক লিখেছেন, “বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠন ও ছাত্রদের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে (ইসলাম বিদ্বেষী বিভিন্ন কটুক্তি) আমি আপনার বরাবরে পদত্যাগ পত্র দাখিল করছি।”
পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস হোসেন বলেন, “শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তদন্তে আজ পূর্ব বরৈয়া ঠান্ডা মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন মহাজনকে উপজেলায় ডাকা হলে শিক্ষার্থীরা এসে তদন্ত ছাড়াই শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি জানায়। পরে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেন।”
চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, এর পেছনে স্থানীয় একদল চিহ্নিত লোক জড়িত যারা স্কুল পরিচালনা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের অংশ হিসেবে এই কাজ করেছে। পদত্যাগের পর ওই শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে একই কায়দায় হিন্দু শিক্ষকদের সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরে এই প্রবণতা বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন স্থানে হয় হিন্দু অথবা আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের উপর বিপদ নেমে আসে। শত শত শিক্ষককে নাজেহাল করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। জোর করে পদত্যাগ করানো হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘ব্যক্তিগত কারণে’ তাঁরা পদত্যাগ করছেন বলে লিখতে বাধ্য হন।
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্কুলেরই এক শিক্ষক মাইনোরিটি ওয়াচকে বলেছেন, “ধর্মীয় বিদ্বেষের কথা ছড়িয়ে প্রধান শিক্ষককে ফাঁসানোর জন্যই সাজানো অভিযোগ তোলা হয়েছে। তাঁকে চাপ দিতে পড়ুয়াদেরকেও উস্কে দেওয়া হয়েছে।”
চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় একদল চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ লোক প্রধান শিক্ষক চন্দন মহাজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ এনে শিক্ষার্থী ছাড়াও কিছু অভিভাবককে উস্কে দেয়। এদের মধ্যে স্কুল পরিচালনা কমিটির দখল নিতে চাওয়া লোকজনও আছে। তারা অভিযোগ তোলে, চন্দন মহাজন ইসলামবিদ্বেষী কথাবার্তা বলেছেন। দাড়ি রাখলে জঙ্গি বা হিজাব-নিকাব নিয়ে কটুক্তি করেছেন—এমন অভিযোগও তোলে তারা। এছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও তোলা হয়।
স্কুলটির একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাইনোরিটি ওয়াচকে বলেন, “ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে প্রধান শিক্ষক চন্দন মহাজনকে ফাঁসানোর জন্যই বেশিরভাগ অভিযোগ তোলা হয়েছে। ছোট ছোট শিশুদের আন্দোলনে যেতে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এদের অনেকে জানেই না শিক্ষকের অপরাধ কী?”
স্থানীয় এক অভিভাবক অভিযোগ করেন, “এই হেনস্তার ঘটনার নেপথ্যে মূলত কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব। বাকি অভিযোগগুলো সাজানো।”
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান শিক্ষক চন্দন মহাজনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।