হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়েছে। রবিবার (২৮ মার্চ) সকাল ১০টার পর শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে দুই জন নিহত এবং অর্ধশত আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে শুক্রবার (২৬ মার্চ) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করে আন্দোলনে হাটহাজারি এবং রাজধানীর বাইতুল মোকারম মসজিদে হামলার ঘটনার প্রতিবাদের পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পর দিন শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শহর এবং নন্দনপুরে পৃথক ঘটনায় ছয় জন নিহত হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করে হেফাজতে ইসলাম।
হরতালের শুরুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা সাজেদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জামিয়া ইউনুছিয়ার সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনও ধরনের উসকানি ছাড়াই শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগ জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়ায় হামলা করে। পরে আত্মরক্ষায় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী প্রতিবাদ গড়ে তোলে।’ এছাড়া নন্দনপুরে গ্রামবাসীর উপর পুলিশের হামলা ও গুলিতে তাদের আট কর্মী নিহত হয় বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকাল ১০টার পর থেকে ট্রাকে করে প্যান্টশার্ট পরিহিত কয়েকশ’ যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে শহরে প্রবেশ করে। এর পর শুরু হয় শহরজুড়ে তাণ্ডব। প্রথমে ঢাকা-থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনে নরসিংহসার এলাকায় হামলা করা হয়। এর পর শহরের জেলা পরিষদ ভবন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে পৌরসভা ভবন, শহর মিলনায়তন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরের উন্নয়ন মেলা, আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, মুক্তিযোদ্ধা ভবন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা সরকারি গ্রন্থাগার, পানি উন্নয়ন বোর্ড, খাটিহাতা হাইওয়ে থানা ও আশুগঞ্জ টোল প্লাজা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের অফিস এবং বাসভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হামলা চলাকালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় ভাঙচুর করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রধান মন্দির আনন্দময়ী কালী বাড়ী, পুলিশ লাইন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। হামলা করা হয় বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পুরো শহরজুড়ে তাণ্ডব চলে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বাইরে শহর বাইপাস পৈরতলা এবং পীরবাড়ী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত অর্ধশত আহত হয়। আহতদের মধ্যে ২৭ জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত হোসেন বলেন, ‘দুই জনকে আমরা নিহত অবস্থায় পেয়েছি। এছাড়া ২৭ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি। আমাদের হাসপাতালের সদস্যরা বিরামহীনভাবে কাজ করছে।’
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ মার্চ নিহত হন ওয়ার্কশপ কর্মী শহরের দাতিয়া এলাকার আশিক (২৪)। ২৭ মার্চ সদর উপজেলার নন্দনপুরে সংঘর্ষে নিহত হয় ছয় জন। রবিবার শহরতলীর পৈরতলা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে শহরের খৈয়াসার এলাকার অজ্ঞাত এক যুবক (২২) নিহত হয়। অন্যদিকে, সরাইল বিশ্ব রোড এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সদর উপজেলার ঘাটুরা গ্রামের সফিউদ্দিনের ছেলে আল আমিন (১৯) নিহত হয়। সব মিলিয়ে গত তিন দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয় জন নিহত হয়েছে।
এদিকে পুলিশের কোনও দায়িত্বশীল সূত্র এ বিষয়ে কথা বলতে চায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত ২৬ মার্চ বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে হামলা ভাঙচুর, রেলস্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও মৎস্য ভবনে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় অজ্ঞাত ছয় হাজার জনকে আসামি করে পুলিশ বাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় তিনটি মামলা রুজু করা হয়। এ ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে রবিবারের তাণ্ডবের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘দিনব্যাপী পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। আওয়ামী লীগের অফিস বেছে বেছে হামলা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় রাষ্ট্র-প্রশাসন সবকিছুই ছিল নির্বিকার।’ তিনি এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।’
স্বীকৃতি: প্রতিবেদনটি [এই লিংক থেকে ] গুগল নিউজ ফিডের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট হয়েছে। মাইনোরিটি ওয়াচ এই লেখা সম্পাদনা করেনি। এই লেখার সকল তথ্য, উপাত্ত, দায়িত্ব এবং কৃতিত্ব এর রচয়িতার।