এম. সুরুজ্জামান, নালিতাবাড়ী, শেরপুর: শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকাজুড়ে কোচ ও গারো নৃগোষ্ঠী সুদীর্ঘকাল থেকে বসবাস করছে। ৩২৭ দশমিক ৬১ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১টি পৌরসভা, ১২টি ইউনিয়ন, ২টি খ্রিস্টান মিশন, ১টি নৃগোষ্ঠী কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। এখানে ১৯৯টি গ্রামে ২ লাখ ৫১ হাজার ৮২০ জন লোকের বসবাস।
এ উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ৭৮টি গ্রামে সহস্রাধিক পরিবারে প্রায় ৪০ হাজার নৃগোষ্ঠীর লোকজন নানা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে আদিকাল থেকেই বসবাস করে আসছে। এই নৃ-সম্প্রদায়ের অন্যতম হলো গারো, হাজং, কোচ, ডালু, বানাই, হদি, বর্মণ ও রাজবংশি। এসব সম্প্রদায়ের রয়েছে আলাদা কৃষ্টি সংস্কৃতি ও আলাদা সমাজ ব্যবস্থা। গারোরা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আর কোচ ও হাজং সম্প্রদায়ের লোকজন সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
গারো সম্প্রদায়ের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত পরিবার। গারোদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো বড়দিন। এ ছাড়াও প্রতি বছর স্টার সানডে, তীর্থ উৎসব, ইংরেজি নববর্ষ ও ওয়ানগালা উৎসব পালন করে থাকে। কোচদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গাপূজা ও কালীপূজা। ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও এ দুই সম্প্রদায়ই আরও অলাদা আলাদা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।
কালের বিবর্তনে বর্তমান ডিজিটাল যুগে এসব গারো, হাজং ও কোচ সম্প্রদায়ের হাজার বছরের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই তাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি রক্ষায় সরকারি-বেসরকারিভাবে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পানিহাটা, তাড়ানি, ফেকামাড়ি, মায়াঘাসি, নাকুগাঁও, দাওধারা, আন্ধারপাড়া, খলচান্দা, বুরুঙ্গা, বাতকুচি, সমেশ্চুড়া, খলিসাকুড়ি, গাছগড়া, নয়াবিল এলাকায় কোচ ও গারো সম্প্রদায়ের বসবাস। এসব এলাকায় বাপ-দাদার বসত ভিটায় তারা বসবাস করে আসছে। বিশ্বের সব মানুষের জীবনমান বাড়লেও তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি। বরং তাদের হজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য ম্লান হতে বসেছে।
নৃগোষ্ঠীর নেতা মি. প্রদীপ জেংচাম বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যাওয়া বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে আছে (আদিবাসীদের ভাষায়) মান্দিদামা, ক্রাম, খোল, নাগ্রা, জিপসি, খক, মিলাম, স্ফি, রাং, বাঁশের বাঁশি, আদুরী। পোশাক হলো দকবান্দা, দকশাড়ী, খকাশিল, দমী, রিক মাচুল আর কোচ সম্প্রদায়ের পোশাক রাংগা লেফেন ও আছাম। আর খাদ্যের তালিকায় আছে বাঁশের বড়ুল আর চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি খাবার উপকরণ ‘মিয়া’, কলাপাতায় করে ছোট মাছ পুড়ে খাওয়া যার নাম ‘ইথিবা’, মুরগির বাচ্চা পুড়ে বাঁশের চোঙায় ভরে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ দিয়ে ভর্তা করে খাওয়া যার নাম ব্রেংআ, মিমিল, কাঁকড়া, শামুক ও শূকরের গোস্ত, চালের তৈরি মদ যার নাম চু আর কোচ সম্প্রদায়ের কাঠমুড়ি ইত্যাদি খাবার উপকরণ এখন প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে।
এ ব্যাপারে নৃগোষ্ঠীর সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (টিডবিউএ) চেয়ারম্যান লুইস নেংমিনজা জানান, নৃ-সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-সংস্কৃতি সংরক্ষণে নালিতাবাড়ীতে আমরা কালচারাল একাডেমি স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
স্বীকৃতি: প্রতিবেদনটি [এই লিংক থেকে ] গুগল নিউজ ফিডের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট হয়েছে। মাইনোরিটি ওয়াচ এই লেখা সম্পাদনা করেনি। এই লেখার সকল তথ্য, উপাত্ত, দায়িত্ব এবং কৃতিত্ব এর রচয়িতার।