সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িদের দ্রুত গ্রেফতারসহ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে নাগরিক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার আলোকে আট দফা সুপারিশে উত্থাপন করে তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ বুধবার দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি ছাড়াও গত ২৬-২৭ মার্চ ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে নাগরিক প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা তনিমা সিদ্দিকী, প্রবীণ কৃষকনেতা অমর চাঁদ দাস, উন্নয়ন সংস্থা এএলআরডি সহকারী প্রকল্প সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ সিরাজী, আইইডির সহসমন্বয়কারী হরেন্দ্র নাথ সিং, আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পারভেজ হাসেমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, হিন্দু পল্লী আক্রমণ ও লুটপাটের মূল হোতাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ওই ঘটনা রুখতে ব্যর্থ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। হেফাজতের হামলা ও নির্যাতনের পর নোয়াগাঁও গ্রামের লোকজনের বিশ্বাস ও আস্থায় চিড় ধরেছে। তাদের সেই বিশ্বাস ও মনোবল ফিরিয়ে দিতে হবে। সেখানে কৃষিনির্ভর গ্রামের লোকজনের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকরা যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বোরো ধান গোলায় তুলতে পারে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে সেই নিরাপত্তা দিতে হবে। ঝুমন দাশ আপনের মা নিভারানী দাশের মায়ের মামলাটি এজাহার আকারে গ্রহণ করে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরো বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সামগ্রী সংগ্রহের জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। শিশুদের খাবার সংগ্রহের জন্যও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এসএসসি পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যে সকল নারী ও শিশুরা এখনও ট্রমার মধ্যে আছে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। আক্রান্তদের যথাযথ ক্ষতি নিরূপন করে সেই মোতাবেক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যে সকল বাড়ীঘর আক্রান্ত হয়েছে তা পুন:নির্মাণ করে দিতে হবে। দূর্গম ওই এলাকায় একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করতে হবে।
মূল বক্তব্যে বলা হয়, ফেসবুকে মিথ্যা স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্মীয় অবমাননার অজুহাতে সংখ্যালঘুদের বাড়ী ঘরে হামলা ও আগুন লাগানোসহ সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটি পরিচিত কৌশল। পূর্বে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার ধারাবাহিকতায় শাল্লায় সংখ্যালঘু নির্যাতন, হয়রানি ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন চাইলেই এ ঘটনা রদ করা যেত। কারণ ঘটনার আগের দিন স্থানীয়ভাবে তারা মিটিং মিছিল করেছে। পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন তা জানতো। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ধর্মীয় উম্মাদনা ছড়িয়ে এক শ্রেণীর মানুষ আপামর মানুষের অন্তরে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
রাজনৈতিক দলের মদদ ছাড়া এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বেড়ে ওঠা সম্ভব নয় দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সকল রাজনৈতিক দল ও সরকারকে এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মদদ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানানো হয়।
স্বীকৃতি: প্রতিবেদনটি [এই লিংক থেকে ] গুগল নিউজ ফিডের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের ওয়েবসাইটে পোস্ট হয়েছে। মাইনোরিটি ওয়াচ এই লেখা সম্পাদনা করেনি। এই লেখার সকল তথ্য, উপাত্ত, দায়িত্ব এবং কৃতিত্ব এর রচয়িতার।